
বিশেষ প্রতিনিধিঃ পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম এর বিরুদ্ধে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২৯ জেলে মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত ১১মার্চ সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকা কাছিকাটার দোলনা পীর, তেঁতুলবাড়িয়া,বকবাড়িয়া,পাগলের খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭নৌকার ২৯জন জেলে আটক করে। আটকের পর চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে সাত নৌকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয় এর পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
আটককৃত জেলেদের সাথে মুক্তি দেওয়ার শর্তে টাকার চুক্তি করেন স্মার্ট পেট্রোল ইন টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদার, সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল ও আনিস। এছাড়া স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে চুক্তি থাকা নৌকাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে একাধিক সূত্রের মাধ্যমে এই তথ্যজানা গেছে। সদ্য সুন্দরবন থেকে ফিরে আশা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলেদের কাছ থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের ডিঙ্গি মারি এলাকা থেকে ৩টা নৌকা আটক করে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম। পরে ২টা নৌকার সাথে আগে থেকে চুক্তি থাকায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়। অপর ১টি নৌকার চুক্তি না থাকায় নৌকাটি চালান দেয়।
চলতি মাসের ৮ই মার্চ নটাবেকি‘র খেজুর দানা এলাকা থেকে ৩টা নৌকা আটক করে বিশেষ টিম । এরমধ্যে হোসেন ও অয়ন কোম্পানির দুইটা নৌকার চুক্তি থাকায় ছেড়ে দেয়। আরেকটা নৌকার চুক্তি না থাকায় নটাবেকি অফিসে জমা দেয়।
পরবর্তী দিন ৯ই মার্চ হলদিবুনিয়া‘র তালপটিখাল এলাকা থেকে বিপুল, হোসেন ও আবু সালেহ কোম্পানির চারটা নৌকা আটক করে চুক্তি থাকায় সেগুলো ছেড়ে দেয় বিশেষ টীম।
১২ই মার্চ মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ৫ টা নৌকা আটক করে স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের সদস্যরা। এরমধ্যে অয়ন ও কামরুল কোম্পানির ২টা করে মোট ৪টা নৌকা আটক করে। পরবর্তীতে চুক্তি থাকায় ঐ নৌকা ৪ ছেড়ে দেয় স্মার্ট পেট্রোলিং টিম। অবশিষ্ট ১টি মজনু কোম্পানির নৌকা।সেটির চুক্তি না থাকায় নৌকা জব্দকরে লোক চালান দেয় বনবিভাগ।
১১ মার্চ দোবেকী মেঘনা এলাকায় থেকে শরীফ কোম্পানির ১ টা, হোসেন কোম্পানির ৩টা নৌকা ও অয়ন কোম্পানির ১টা পারসে পোনার বোট আটকের পর তাদের সাথে চুক্তি থাকায় সবগুলো ছেড়ে দেয়।
তথ্য অনুসন্ধান আরও উঠে আসে স্মার্ট পেট্রলিং টিমের সাথে মাছ কোম্পানিদের চুক্তি। কার মাধ্যমে টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হবে। কোন বিকাশে টাকা দিতে হবে।এরকম আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে থাকছে -২ পর্ব।
তবে বর্তমানে প্রতি গণে নৌকার ধরন অনুযায়ী ২ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তি করে বিশেষ টিমের নামে জেলেদের রক্তচোষা এই সরকারি বাহিনী।
আটককৃত জেলে সালাম বলেন, সুন্দরবনের তেতুলবাড়িয়া এলাকা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমার মাছের নৌকা আটক করে।
আটকের পরপরই স্পিড বোর্ড ড্রাইভার হাবিব ও ফাইবার ড্রাইভার পারভেজ আমার কাছে চারজন লোকসহ একটি নৌকার মুক্তির জন্য এক লক্ষ টাকা দাবি করে। সর্বশেষ একটি বিকাশ নাম্বারের ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পাই।
জেলে আব্দুর রহিম জানান, বনদস্যুর পাশাপাশি বন বিভাগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। গত গণে বনে মাছ ধরতে যেয়ে কাচিকাটা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমাদেরকে আটক করে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। একদিকে বনদস্য টাকা নিচ্ছে অন্যদিকে বন বিভাগের সাথে চুক্তি না করে সুন্দরবনে প্রবেশ করলে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে নৌকা ডিঙ্গি সব হারাতে হয়।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা স্মার্ট পেট্রোলিং টিম- ১ এর টিম লিডার শিবেন মজুমদার বলেন, আমার গায়ে জ্বর এসব বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না। টাকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিংকর্তব্যবিমুঢ়।
এই অভিযানে থাকা সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল বলেন, আমি নতুন মানুষ আমি এসব কিছু বুঝিনা। এখানে টিম লিডারের কথা শুনতে হয়।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বলেন, স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, যদি এ ধরনের সে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে থাকে অবশ্যই ডিপার্টমেন্ট তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।