জি এম মাছুম বিল্লাহ স্টাফ রিপোর্টার: শীতের শুরু থেকে সুন্দরবনে হরিণ শিকারে মেতে উঠেছে চোরা শিকারিরা। নির্বিচারে মারা হচ্ছে সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ। বনবিভাগের কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত টহল অব্যাহত থাকলেও কমানো যাচ্ছে না নির্বিচারে হরিণ শিকার।এভাবে যদি প্রতিনিয়ত চোরা শিকারিদের হাতে হরিণ শিকার হয় তাহলে প্রাণী সংকটে পড়বে সুন্দরবন। অত্যান্ত কৌশলি চোরা শিকারিরা মূলত দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মূল শিকারিরা সুন্দরবনের ভিতর থেকে হরিণ এনে লোকালয়ে পৌঁছে দেয়। উপরে থাকা সহযোগীরা সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে।চোরা শিকারিরা হরিণ শিকারে গহিন সুন্দরবন থেকে শুরু করে লোকালয়ের কাছাকাছি এলাকায় ফাঁদ ও চোরাই বন্দুকের সহযোগিতা নির্বিচারে হরিণ শিকার করে বলে জানা যায়।গভীর সুন্দরবনের কালিরচর, আগ্রাকোনা,বালীঝাকি,ফিরিঙ্গী,মেঘনা,পাতকোষ্টা,কাগা,পাগড়াতলি,তালতলী,ইলশেমারি,মানিকচোরা,কাছিকাটা,খলিশাবুনিয়া ও লোকালয়ের কাছাকাছি তেরকাটি, কলাগাছিয়া,সাপখালী,খলশেবুনিয়া,সন্যাসির খালসহ নাম না জানা অনেক এলাকায় হরিণের সংখ্যা বেশি থাকায় চোরা শিকারিদের লক্ষ্য থাকে।চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম এমন বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সুন্দরবনের ভিতরে হরিণ জবাই করার ভিডিও ফুটেজ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি গহিন সুন্দরবনের কালির চর থেকে শিকারিদের ফাঁধে শিকার হয়ে পড়ে থাকা একটা হরিণের ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সংবাদ কর্মীদের হতে পৌছায়। সেখানে দেখা গেছে হরিণের পায়ে ফাঁদে বেঁধে থাকা অবস্থায় পড়ে আছে। বনবিভাগের অভিযানে হাতে নাতে কয়েকটি পাচারকারি সহ চোরাকারবারিদের যানবহন আটক করলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কিছু দিনের মধ্যে বের হয়ে এসে পুনরায় নেমে পড়ে হরিণ শিকারে। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালে হরিণ শিকারের অপরাধে ১৪ টি মামলা দেওয়া হয়েছে।এ মামলায় ৩৩ জন আসামি সহ ৮৩ কেজি মাংস ও ৬৯৯ টা হরিণ মারা ফাঁধ উদ্ধার করে বনবিভাগ।সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী বনবিভাগের কাছে হরিণ শিকারিদের ৪ ষ্টেশনে ১০৮ জনের একটা তালিকাও রয়েছে। তার মধ্যে কোবাদক ষ্টেশনে ৩০ জন, বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশনে ৪২ জন, কদমতলা ষ্টেশনে ২০ জন, কৈখালী ষ্টেশনে ১৬ জন। তালিকা ছাড়াও আরো অনেকে হরিণ শিকারের সাথে জড়িত রয়েছে বলেও জানাযায়। চোরাকারবারিরা হরিণ শিকার করে নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪ ষ্টেশনের আওয়াতাধীন কোবাদকের গোলখালি, গাড়িলাল বাজার, গাবুরা নাপিত খালি, বুড়িগোলিনীর ষ্টেশনের গাবুরার ৯ নং সোরা, ডুমুরিয়া, ১৪ রশি,দাতিনাখালির মহসিন সাহেবের হুলা ও চেয়ারম্যান মোড়। কদমতলার ষ্টেশনের মুন্সীগন্জ মৌখালী, সরদার বাড়ি, হরিনগর বাজার ও চুনকুড়ি। কৈখালী ষ্টেশনের পাশ্বেখালি, টেংরা খালি, কালিঞ্চি, ভেটখালি ও কৈখালী সহ চোরা শিকারিদের সুবিধা মত রুট ব্যাবহার করে থাকে। পরিবহন হিসাবে মটর সাইকেল,প্রাইভেট কার ব্যবহার করে থাকে।বুড়িগোয়ালিনি স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, আমরা হরিণ শিকারিদের ধরতে সব সময় অভিযান পরিচালনা করছি। সম্প্রতি গত ৭-৮ জানুয়ারীতে অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের খলশেবুনিয়া,তেরকাটি,মহাসিন সাহেবের হুলার উল্টা পাশ থেকে হরিণ মারা ৬০ ফাঁধ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।আজও একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে অভিযান পরিচালনা করছেন।সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম কে এম ইকবাল হোছাইন ইকবাল হোসাইন চৌধুরি বলেন, আমার সব সময় সজাগ আছি। বিশেষ করে হরিণ শিকারিদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সঠিক তথ্য পেলে তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কায়েকটা হরিণ শিকারিকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।